ফেসবুকে আপনি আপনার মূল্যবান কতটুকু সময় নষ্ট করছেন? কখনো কি একবারও ভেবেছেন?



একজন মানুষ এখন একেবারে কম করে হলেও দিনে চার ঘণ্টা ফেইসবুকে থাকেন। 'চার ঘণ্টা' শুনতে যতো ভারিক্কি দেখাচ্ছে, ফেইসবুকে কাটানোর জন্যে তা একেবারে খুব কম একটা টাইম স্কেল। মার্ক জুকারবার্গের মাথা আর আমার মাথার মধ্যে পার্থক্য আছে। জুকারবার্গের ফেইসবুকের ফিচারটা এমনভাবে তৈরি যে, এখানে আপনি একবার ঢুকে পড়লেই কেল্লাফতে। অন্ধকার কৃষ্ণগহ্বরেরও কূল-কিনারা খুঁজে পাওয়া সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু ফেইসবুক স্ক্রল করা শুরু করলে এর শেষ খুঁজে পাওয়াটা রীতিমতো অসম্ভব।


এই তুমুল নাভিশ্বাস তোলা কোন ফেইসবুক বিতর্ক দেখছেন তো, ওই কোন চটকদার সংবাদ। কে কার পেছনে লাগলো, কে কাকে পঁচিয়ে পোস্ট দিলো বা ট্রল করলো, কে কাকে রিফিউট করলো ইত্যাদি দেখতে দেখতে, এবং কমেন্ট সেকশনের বিতর্ক সভা উপভোগ করতে গিয়ে কোন ফাঁকে যে আপনি জীবনের চারটে ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন তা আপনি নিজেই বুঝতে পারেন না। সাথে যদি আপনার নিজেরও দু একখানা নরম-গরম পোস্ট দেওয়ার থাকে তাহলে তো হলোই!


কিন্তু দেখুন,

 একটা মানুষের জন্য প্রতিদিনের সময়টা একেবারে কড়ায় গন্ডায় নির্দিষ্ট। চব্বিশ ঘণ্টার চেয়ে একটু বেশি কিংবা কম সময় আমাদের হাতে মজুদ নেই কোনোভাবেই


এই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অতি-আবশ্যিকভাবে ছয় ঘণ্টা আমরা ঘুমিয়ে কাটাই। গড়ে আট ঘণ্টা কাটাই কাজে, স্কুল-কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে, দুই ঘন্টা চলে যায় খাবার খাওয়া এবং তার বন্দোবস্তের কাজে। ঢাকা শহর হলে একঘণ্টা জ্যামে বা পথে শেষ! সকালে গোসল থেকে শুরু করে রাতে ফিরে ক্লান্ত শরীরের খানিক অবসর সবকিছুর জন্যেও যদি একঘণ্টা ধরা হয়, সবমিলিয়ে তাও প্রায় ঊনিশ ঘণ্টা আমরা এভাবেই পার করে দিই। এর বাইরে সালাত, বিভিন্ন জনকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া সময়, আড্ডা, ফোন কল ইত্যাদির পেছনে যদি একঘণ্টা যায়, জীবন থেকে বিশটা ঘণ্টা একেবারে হাওয়া!


আর বাকি থাকলো চার ঘণ্টা!


এখন, প্রতিদিন গড়ে যদি আমরা চার ঘণ্টা ফেইসবুকেই কাটাই, তাহলে দিনশেষে জীবনের কতো বিশাল একটা অংশ আমরা জুকারবার্গকে দিচ্ছি তার হিশেব আছে?


এই চারটে ঘণ্টা হয়তো আপনার পরিবারের হক ছিলো। আপনার সন্তানকে দেখভালের জন্যে, আপনার স্ত্রীকে দেওয়ার জন্যে, আপনার বাবা-মা কিংবা আত্মীয়স্বজনকে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু আপনি তা দিচ্ছেন ফেইসবুককে।


এই চার ঘণ্টায় আপনি অনেককিছুই করতে পারতেন। প্রতিদিন একঘণ্টা সময় দিলে আপনি কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের জন্যে তাজউইদটা ঠিক করে নিতে পারেন স্রেফ এক মাসেই।


প্রতিদিন একঘণ্টায় যদি ত্রিশ পৃষ্ঠাও বই পড়েন, আগামি একমাসে আপনি প্রায় নয়শো পৃষ্টা পড়তে পারেন একেবারে অনায়েশে। নয়শো পৃষ্টা! ধারণা করতে পারেন কতোগুলো বই শেষ করা যায় তাহলে?


প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে সময় দিয়ে যদি কোন স্কিল ডেভেলপমেন্টের কোর্স করেন, তাহলে আগামি মাস পাঁচেকে আপনি উক্ত বিষয়ে বেশ অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারেন। প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে স্কিল নেই মানে আপনার মূল্যও শুণ্য!


প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে যদি নিজের আত্মিক উন্নয়নে সময় দেন, যেমন- ফরয সালাতগুলোর পর লম্বা সময় ধরে যিকির-আযকার করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, রাতের জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট করা যখন আপনি তাহাজ্জুদের জন্য জাগবেন, সকালের সালাতুত দুহা পড়া ইত্যাদি। এসব করার পর স্প্রিচ্যুয়ালি আপনি কেমন মুসলিম হয়ে উঠবেন তা এই প্র‍্যাকটিসের মধ্য দিয়ে না গেলে আপনাকে বোঝানো সম্ভব নয়।


এই চার ঘণ্টায় দুনিয়ায় আপনি-আমি অনেককিছুই করতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কিছুই করতে পারছিনা কারণ- মার্ক জুকারবার্গ তার ফেইসবুক শিকলে বেঁধে ফেলেছে আমাদের পা। আমরা ফেইসবুক বিতর্কগুলোতে অংশ নিয়ে, মজা দেখে, অন্যকে খোঁচা দিয়ে, ট্রল করে, রিফিউট করে ভাবছি যে খুব তো কাজের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দিনশেষে আমাদের প্রাপ্তির খাতা? শূণ্য!


আপনি ভাবছেন দুনিয়া উল্টে যাচ্ছে আর আপনি ফেইসবুকে বসেই দুনিয়া উদ্ধার করবেন। খুবই লোভনীয় ভুল কথা!

ফেইসবুকে বসে বসে আপনি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হারানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না দুনিয়ার
। কিন্তু, যদি নিজেকে গড়তে পারেন, উল্টে যাওয়া দুনিয়ার বুকে একটা পেরেক অন্তত মারতে পারবেন। ওই পেরেকটার নাম- 'Better version of YOURSELF'.


লিখেছেন: প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর লেখক,

আরিফ আজাদ ভাই মহান আল্লাহ উনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.